ফিওদর দস্তইয়েফ্স্কির যে কয়েকটি ছোট আখ্যান তেমন পরিচিত নয়, কিন্তু অতি উত্তম মানের লেখা বলে পণ্ডিতমহলে স্বীকৃত, নিরীহ নামে মশিউল আলমের অনূদিত এই উপন্যাসিকা সেগুলোর অন্যতম। এর রুশ নাম ক্রোৎকায়া, মশিউল আলম এটি অনুবাদ করেছেন মূল রুশ থেকেই। নোবেল বিজয়ী নরওয়েজীয় ঔপন্যাসিক নুট হামসুনসহ অনেকের মতে এটা দস্তইয়েফ্স্কির শ্রেষ্ঠ নভেলা। কিছু গবেষক বলেন, ভ্লাদিমির নাবোকভের সারা জাগানো উপন্যাস লোলিতার অনুপ্রেরণা দস্তইয়েফস্কির এই নিরীহ মেয়েটি।
একটি সত্য ঘটনায় ভীষণভাবে নাড়া খেয়ে দস্তইয়েফ্স্কি ক্রোৎকায়া লিখেছিলেন। ১৮৭৬ সালের ৩ অক্টোবর নোভোয়ে ভ্রেমিয়া (নতুন সময়) নামের একটি সংবাদপত্রে মস্কো শহরে এক তরুণীর আত্মহত্যা সম্পর্কে একটি খবর ছাপা হয়। সে একটা ছয়তলা বাড়ির চিলেকোঠার জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। আত্মীয়-পরিজনহীন মস্কো শহরে মেয়েটি এক দর্জিঘরে খ-কালীন সেলাইয়ের কাজ করত অত্যন্ত কম মজুরিতে। সে আত্মহত্যার জন্য ঝাঁপ দিয়েছিল যিশুমাতা মেরির আইকন বুকে নিয়ে।
এই খবর পড়ে দস্তইয়েফ্স্কির বেশ নাড়া খান; যতটা মেয়েটির আত্মহত্যার জন্য, তার চেয়ে বেশি এ জন্য যে সে আত্মহত্যা করেছে যিশুমাতার মেরির আইকন বুকে নিয়ে।
একই বয়সী এক তরুণী আত্মহত্যা করার পর থেকে শুরু হয়েছে দস্তইয়েফ্স্কির এই উপন্যাসের কাহিনি। তার লাশ পাশের ঘরে একটা টেবিলে, কাল কবর হবে; তার স্বামী, যে একজন বন্ধক কারবারি, চল্লিশোর্ধ বয়সে যে ষোল বছর বয়সী মেয়েটিকে বিয়ে করেছিল, সে অস্থিরভাবে ঘরময় পায়চারি করে চলেছে, ক্ষণে ক্ষণে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে আসছে মৃত স্ত্রীকে। আপন মনে কথা বলে চলেছে সে; কখনো নিজের সঙ্গে, কখনো অদৃশ্য শ্রোতাদের উদ্দেশে। ঘটনার আকস্মিকতা ও মর্মস্পর্শিতায় ভীষণভাবে বিভ্রান্ত হয়ে নিজের ভাবনাগুলো গোছানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনো কিছুই সামলাতে পারছে না। লোকটার ভীষণ এলোমেলো, স্ববিরোধী, অসামঞ্জস্যপূর্ণ আত্মকথনের মধ্য দিয়ে মানবচরিত্রের বিচিত্র জটিলতা ফুটে উঠেছে।
দার্শনিকতার সঙ্গে সাসপেন্স বা উত্তেজনা সৃষ্টিতে দস্তইয়েফস্কি যে অদ্বিতীয় শিল্পী, এই নিরীহ নামের নভেলা তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
Reviews
There are no reviews yet.