সাহিত্যের শাখার মধ্যে গল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্গ ।মিশেল ফুকোর (১৯২৬-১৯৮৪) মতে গল্পের শক্তিশালী হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় আলিফ লাইলা আখ্যানে। প্রতি রাতে শাহেরজাদির মৃত্যু পরোয়ানা নাকচ হয় গল্প বলার দক্ষতায়। যদিও আলিফ
লাইলার গল্প আর আধুনিক ছোটগল্প আলাদা, তবুও গল্পের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সৈয়দ শামসুল হক সৃজনশীল অন্যান্য মাধ্যমে যেমন উপহার দিয়েছেন বহু সৃষ্টিকর্ম তেমনই ছোটগল্পও লিখেছেন শতাধিক ।কাহিনি বর্ণনার উপরি কাঠামোয় এই গল্পকার ব্যবহার করেছেন ‘ছাঁচ’। জলেশ্বরীর গল্পে এই ছাঁচ হয়েছে ‘আমরা’ সমষ্টিবাচক শব্দ ও জনপদ হিসেবে‘জলেশ্বরী’ শব্দটি স্বয়ং। অসংখ্য গল্পে তিনি পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করেছেন এমন কিছু কৌশল যা কাহিনি নির্মাণকে দিয়েছে নতুনত্বের ব্যঞ্জনা ।এটি ব্যবহারের জন্য কাহিনিকে মনে হয় অগতানুগতিক ও স্বতন্ত্র। তাঁর বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই ছিল নিরন্তর নিরীক্ষা প্রবণতা, সন্তুষ্ট থাকতে পারেন নি গল্পের প্রথাগত বয়ান-রীতিতে। গল্প বলা পদ্ধতির নামকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নামের ব্যবহার থেকেও এটি প্রমাণিত হয়। কখনও গল্প লেখাকে বলেছেন ‘সৃজনশীল সাংবাদিকতা’, কখনও বলেছেন
‘গল্পপ্রবন্ধ’ আবার কখনও ‘গল্পপট’ – অর্থাৎ নিরন্তর ভাংচুর ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে তাঁর গল্পচিন্তা । যেন তিনি খানিকটা সন্দিহান যে বাঙালি পাঠক খুব বেশি নিরীক্ষাধর্মী গল্পকে না-জানি কেমনভাবে গ্রহণ করে!
তাঁর ছোটগল্প রচনার স্বাতন্ত্রিকতায় উজ্জ্বল।উল্লেখযোগ্য স্বকীয়তা এ-মাধ্যমটিতে তিনি অর্জন করেছেন দীর্ঘদিনের চর্চায়। সেই স্বকীয়তাগুলোকে শনাক্তের মাধ্যমে বৈশিষ্ট্য নিরূপণের চেষ্টা হয়েছে  সৈয়দ শামসুল হকের ছোটগল্প : বৈচিত্র্য ও শিল্পশৈলী গ্রন্থে। এতে গল্পকারের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিচয় সুধীজনের নিকট পরিষ্কার হবে।